রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আলজাজিরার প্রতিবেদন: ভারতীয় ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে বাংলাদেশি রোগীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হল সভাপতি সজিব গ্রেফতার বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র-বোমা উদ্ধার করল সেনাবাহিনী পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন বন্ধে জোরদার হচ্ছে অভিযান আইসিউতে মুশফিক ফারহান সাবেক প্রতিমন্ত্রীর চাচাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে পিটুনি ফ্যাসিবাদের ঘৃণাস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি তারেক রহমানের ৪ মামলা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আগামী সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ১২০ দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে যেসব প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে কমিশন
রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকারোক্তি দেওয়া দুই সেনা কোথায়

রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকারোক্তি দেওয়া দুই সেনা কোথায়

স্বদেশ ডেস্ক:

মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালের আগস্টে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে দেশটির দুই সেনা সদস্য। নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এক শুনানিতে মিয়ানমারের দুই সেনা সদস্য স্বীকার করেছে যে, ওই অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের দেখামাত্র তাদের গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। স্বীকারোক্তিতে রাখাইনে সে সময় তারা কীভাবে রোহিঙ্গাদের একের পর এক গ্রাম ধ্বংস, হত্যা, গণকবর ও নারীদের ধর্ষণ করেছে তারও বর্ণনা দিয়েছে। দুটি সংবাদমাধ্যম ও একটি মানবাধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মিয়ানমারের পক্ষ ত্যাগকারী দুই সেনা গণহত্যার স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর তাদের নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস, ক্যানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন ও অলাভজনক সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস বলেছে, যে ভিডিওতে দুই সেনা এই স্বীকারোক্তি তারা দিয়েছে, সেটি এ বছরই মিয়ানমারে ধারণ করা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমগুলোর উদ্ধৃত করা এ ভিডিও রয়টার্স দেখেনি বলে জানাচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসও বলেছে তাদের পক্ষে ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। খবর বিবিসির।

এর আগে গণমাধ্যমগুলোর

খবরে বলা হয়েছে, মিও উইন তুন ও জ্য নায়েং তুন নামে এই দুই সেনা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হেফাজতে ছিল। সে অবস্থাতেই গণহত্যার স্বীকারোক্তি দেয় তারা। পরে তাদের নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে তারা সাক্ষী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে কিংবা বিচারের মুখোমুখি হতে পারে।

কিন্তু রয়টার্স বলছে, খবরে এটা স্পষ্ট নয় এ দুজন কী করে আরাকান আর্মির হাতে ধরা পড়ল, কেন তারা কথা বলল এবং কীভাবে এবং কার দায়িত্বে তারা দ্য হেগে পৌঁছল। আবার আইসিসির মুখপাত্র ফাদি এল আবদাল্লাহ জানিয়েছেন, যে খবর প্রকাশ হয়েছে তা সত্য নয়। এ দুই সেনা তাদের হেফাজতে নেই।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আইসিসিতে অভিযোগকারী পক্ষ বাংলাদেশের আইনজীবী পায়াম আখাভান রয়টার্সকে বলেন, ‘ওই দুই ব্যক্তি সীমান্তের চৌকিতে এসে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা এবং ধর্ষণের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, এ দুই ব্যক্তি এখন আর বাংলাদেশে নেই।

একই বিষয়ে আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইন থু খা বলেন, এ দুজন যুদ্ধবন্দি ছিলেন না। তবে তারা কোথায় আছেন সে প্রসঙ্গে খোলাসা করে তিনি কিছু বলেননি। শুধু এটুকু বলেন, আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের শিকারদের ন্যায়বিচারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এদিকে রয়টার্স দাবি করেছে, দুই সেনার স্বীকারোক্তি বিষয়ে মন্তব্য জানতে তাদের ফোন কলে কোনো সাড়া দেয়নি মিয়ানমারের সরকার এবং সেনাবাহিনী। তবে মিয়ানমারের গণমাধ্যম দ্য ইরাবতি জানায়, দুই সেনার স্বীকারোক্তির ভিডিও নিয়ে সেনাবাহিনী প্রশ্ন তুলেছে। গতকাল বুধবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল জ্য মিন তুন বলেন, এখানে যা ঘটেছিল তার সঙ্গে দুই সেনার বক্তব্যে সামঞ্জস্য ছিল না। আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব তারা সত্য বলছে?’

তবে এই দুই সেনা যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তা জ্য মিন তুন অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, এই দুজনকে ২০১৯ সালে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আরাকান আর্মি। সবাই জানে আরাকান আর্মি রাখাইনের জনগণের ওপর কী নৃশংসতা চালিয়েছিল। তাই এই দুই সেনার ভাগ্যে কী ঘটেছে অনুমান করা যায়। তাদের হয়তো সেনাবাহিনীর পোশাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।’

২০১৭ সালের আগস্টে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। শুরু হয় একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের। জাতিসংঘ এ গণহত্যাকে পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ হিসেবেও উল্লেখ করেছে। তবে নানা তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী সব সময়ই গণহত্যার কথা অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, তারা ২০১৭ সালে শুধু সেসব রোহিঙ্গা জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, যারা পুলিশের চৌকিতে হামলা করেছে।

রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে যেতে বাধ্য করা, নিপীড়ন ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করছে আইসিসি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। তবে এখনো সেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়নি বা সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়নি।

আইসিসির কৌঁসুলির অফিস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান তদন্ত সম্পর্কে জল্পনা বা খবরের ওপর কোনো মতামত তারা করে না। চলমান তদন্ত কর্মসূচির কোনো সুনির্দিষ্ট দিক নিয়েও তারা আলোচনা করে না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877